চিত্রাঙ্গদা

চিত্রাঙ্গদা মহাভারতের একটি চরিত্র। কে ছিলেন এই চিত্রাঙ্গদা ?? মহাভারতের কোন চরিত্রের সাথে তিনি সম্পর্কিত? তার জীবনী কী? চিত্রাঙ্গদার নামটি আপনি কোথায় শুনেছেন, এ নিয়ে একটু বিচার করুন …!


ছোট বেলার ভালোবাসা

চিত্রাঙ্গদা এর আগে এত অপমান বোধ কখনও করেনি। সে শিকারের অভিপ্রায় ছেড়ে দিয়ে অবিলম্বে তার প্রাসাদে ফিরে এল। তিনি শিকারের জন্য পরা পুরুষ পোষাকটি খুলে ফেললেন এবং মহিলাদের সুন্দর পোশাক এবং অলঙ্কার পরে নিলেন। এরপরে তিনি নিজেকে আয়নায় তাকালেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি মোটেও সুন্দরী নন এবং অর্জুনের মতো পুরুষ তাকে কিছু করবেন না। তিনি এত হতাশ হয়ে গেলেন যে বিছানায় পড়ে কাঁদতে লাগলেন।

এটা সত্য যে চিত্রাঙ্গদা সুন্দর ছিলেন না। তিনি সত্যিই কুরূপ ছিলেন। তার বাবার কোনও ছেলে ছিল না। তাই তিনি তাঁর মেয়েকে এমন সমস্ত শিক্ষা দিয়েছেন যা সাধারণত কোনও রাজপুত্রকে দেওয়া হয়। তিনি একজন ভাল ঘোড়সওয়ার ছিলেন এবং সমস্ত ধরণের ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। সে তার বাবার সৈন্যদের চেয়ে অস্ত্র চালাতে অনেক বেশি প্রতিভাশালী ছিলেন। সে শিকারের শৌখিন ছিলেন। তিনি শত্রুদের বিরুদ্ধে রাজার বাহিনীর নেতৃত্ব করতেন। তিনি চোর এবং ডাকাতদের, যারা জনগণকে খুব কষ্ট দিতো, খুব ই কঠোরভাবে তাদের দমন করেছিলেন । কখনও-কখনও সে একাই তাদের সাথে লড়াই করত। এই সমস্ত কিছুর কারণেই চিত্রাঙ্গদা দেখতে অত্যাশ্চর্য ও পুরুষের মতো ছিলেন।

রাজা তাকে তাঁর উত্তরাধিকারী এবং সেনার সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁর সৈন্য, দরবার এবং রাজকুমাররা সকলেই তার সাহস এবং দক্ষতার প্রশংসা করতেন। তিনি তাঁর উপাসনা ও করতেন কিন্তু কেউই তাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়নি। এরকম কুরুপ ও পুরুষের মতো মহিলাকে কেউ নিজের স্ত্রী করতে চায়নি। চিত্রাঙ্গদা বিছানায় শুয়ে সারা রাত কাঁদছিল। তার দাসীটি, রাজকন্যা কেন দুঃখ পেয়েছিল তা জানার জন্য খুব চেষ্টা করেছিল।

অনেক খোশামদ এর পরে চিত্রাঙ্গদা তাঁর মনের কথা যা বলেছিলেন, "আমি অর্জুনকে ভালবাসি।" সে তার দাসী কে  বলল।

“ছোটবেলা থেকেই তিনি আমার মনে থাকতেন। এত বছর তার জন্য অপেক্ষা করতে আমার আপত্তি হয়ে নি। অবশেষে যখন আমি তার সাথে দেখা করলাম, তিনি আমাকে উপেক্ষা করলেন। এখন আমার মনে হচ্ছে এর পরে আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন। আমার সাহসী মানুষটির মতো সাহসী হয়ে কী লাভ? "

তিনি কেঁদে-কেঁদে বললেন, "অর্ধেক পৃথিবী পুরুষদের দ্বারা পূর্ণ। তাদের মধ্যে অনেক রাজা এবং যোদ্ধা আছে কিন্তু কেউই বীরত্বেতে আমার সাথে মেলে না, তবে আমি যোদ্ধা হয়ে সন্তুষ্ট নই। এখন আমি অনুভব করছি যে আমিও একজন মহিলা। আমি চাই একজন পুরুষ আমাকে একজন মহিলা হিসাবে ভাবুক এবং সে রকম আচরণ করুক, তবে দেখ না অর্জুন আমার কিভাবে তিরস্কার করেছেন। আমি এখনকার মতো এতটা অপমানিত, পরাজিত ও দুঃখ কখনো পাইনি। আমি যদি মরে যেতাম ...! "চিত্রাঙ্গদা ফুফিয়ে ফুফিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদল।